District Dinajpur
উদ্যোক্তা সৃষ্টি ও দক্ষতা উন্নয়ন প্রকল্পের জেলা কার্যালয় দিনাজপুর হতে এস এম তারেক জুবায়ের, বিশাল কুমার গুপ্ত ও দারুস সালাম ৪র্থ ব্যাচে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে দিনাজপুর সরকারি কলেজ হতে ইংরেজী সাহিত্যে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন এই তিন জনই। শিক্ষা জীবনেও তারা একত্রে থেকে নানা সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রমে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। বিশাল কুমার গুপ্ত দিনাজপুর সরকারি কলেজ শাখার রেডক্রিসেন্ট ইউনিটের সভাপতি হিসেবে সফলভাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। অপর দিকে তারেক জুবায়ের ও দারুস সালাম পাশে থেকে বিশাল কুমার গুপ্তকে সহযোগিতা করেন। শিক্ষা জীবন থেকে কর্মজীবন শুরুর প্রাক্কালে তারা সিদ্ধান্ত নেয় উদ্যোক্তা হবার। স্থানীয় পত্রিকার মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন “উদ্যোক্তা সৃষ্টি এবং দক্ষতা উন্নয়ন প্রকল্প” দিনাজপুর জেলা কার্যালয়ের ঠিকানা জেনে তারা প্রশিক্ষণ নেয়ার জন্য যোগাযোগ করেন। তারা এক মাসের প্রশিক্ষণ শেষে সিদ্ধান্ত নেয় উদ্যোক্তা হবার। প্রথম পর্যায়ে তারা দিনাজপুরের শত বছরের ঐতিহ্যবাহী পাপড় বানানো ও বিপণনের উপর পরিকল্পনা হাতে নেয়। এরপর তারা ট্রেড লাইসেন্স করেন দিনাজপুর পৌরসভা থেকে। পাশাপাশি জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় শিল্প মন্ত্রণালয় হতে তাদের পণ্যের ট্রেড মার্কের লাইসেন্স পেতে সহযোগিতা করা হয়। ২০২০ ইং সালে দিনাজপুর জেলায় অনুষ্ঠিত এসএমই পণ্য মেলায় তাদের পণ্যের শুভ উদ্বোধন করেন দিনাজপুর জেলার সুযোগ্য জেলা প্রশাসক জনাব মাহমুদুল আলম। দিনারাজ ফুডস প্রোডাক্টসের ব্যানারে তাদের এই পাপড় বানানোর ক্ষেত্রে প্রায় ৩৫ জন নারী শ্রমিকের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। তাদের উৎপাদিত পণ্য ঢাকার বিভিন্ন অভিজাত সুপার শপে বিক্রি হচ্ছে। করোনা পরিস্থিতির পূর্বে তাদের উৎপাদিত পাপড়ের চাহিদা ছিল দৈনিক ৮০-৯০ কেজি। এই তিন জনের সাথে কথা বলে জানা যায় যে, তাদের উৎপাদিত পাপড় এক্সপোর্ট কোয়ালিটি সম্পন্ন। তাদের ভবিষ্যত লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো দিনারাজ ফুডস কোম্পানীকে আরো সমৃদ্ধ করা এবং কর্মসস্থানের মাধ্যমে বেকারত্ব দূরীকরন করা। প্রাথমিক পর্যায়ে তারা ৫ লাখ টাকা ব্যবসা কাজে বিনিয়োগ করেন, এই বিনিয়োগের পুরো টাকাই তারা তাদের ছাত্রজীবনে টিউশন সহ নানা উপায়ে জমানো টাকা থেকে তারা এই প্রজেক্ট এ অর্থ যোগান দেয়। আমাদের যুব সমাজ যদি এই তিনজনের মত চিন্তা করে সামনের দিকে ধাবিত হয় তাহলে সোনার বাংলাদেশ গড়তে বেশী সময় লাগবে না।

নদীমাতৃক ও কৃষিপ্রধান বাংলাদেশের আগামীর অগ্রযাত্রায় বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলার লক্ষে শিল্পের ব্যবহার অপরিহার্য। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক হলো নারী জনগোষ্ঠী। নারীরা আজ চারদেয়ালের আবদ্ধ জীবনের গন্ডি পেরিয়ে মুক্ত বিহঙ্গের মত পাখা মেলে পুরুষের পাশাপাশি সমান তালে চলতে শিখেছে। নারীরা নিজেদের কর্মদক্ষতা সর্ব ক্ষেত্রে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে। বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পেছনে নারী সমাজের ভূমিকা অনস্বীকার্য। বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নারী সমাজের উন্নয়নের লক্ষ্যে নানামূখী পদক্ষেপ নিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় কতৃক গৃহীত এবং বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন উদ্যোক্তা সৃষ্টি ও দক্ষতা উন্নয়ন প্রকল্প তেমনি একটি প্লাটফর্ম। শিল্পোন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণে বর্তমান সরকার উদ্যোক্তা সৃষ্টির ব্যপারে বেশী মনযোগী। বিদেশী বিনিয়োগকারীদের মাঝে বিনিয়োগের পরিবেশ সৃষ্টি করে দেবার লক্ষ্যে বর্তমান বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালুর পাশাপাশি নানা ব্যবস্থা হাতে নিয়েছে উদ্যোক্তা সৃষ্টি ও দক্ষতা উন্নয়ন প্রকল্প। দিনাজপুর জেলা কার্যালয়ের অধীনে প্রশিক্ষণ নিয়ে মাহমুদা বেগম আজ বুটিক্স এর ব্যবসা শুরু করেছেন এবং তাঁর অধীনে প্রায় ৩২ জন নারীর কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। মাহমুদা বেগমের উঠে আসার পথটি খুব সহজ সাধ্য ছিলনা। প্রশিক্ষণ নেয়ার পূর্বে তিনি ব্যবসা-বাণিজ্য সম্পর্কে তেমন কিছু জানতেননা। অথচ ব্লক-বুটিক্সের কাজে তার একটি ভালো ধারণা ছিল। তিনি প্রথম ব্যাচের একজন প্রশিক্ষণার্থী, তার রেজিষ্ট্রেশণ নং-২৭০১৬১ তার স্বামী জনাব জাবেদ মোস্তাক ২০১৮ সালে মারা গেলে পুরো সংসারের দেখাশোনার ভার মাহমুদা বেগমের উপর পড়ে। এ সময় তিনি উদ্যোক্তা সৃষ্টি ও দক্ষতা উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে প্রশিক্ষণ নেন এবং এক মাসের একটি বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কার্যক্রম সফলতার সাথে শেষ করেন। এরপর তার মধ্যে উদ্যোক্তা হবার আগ্রহ তৈরি হয়। এসময় তিনি ব্লক বুটিক্সের উপর পূর্ব অর্জিত ধারণাকে ব্যবসায়িক দিকে কাজে লাগানোর নিমিত্তে তিনি সাহস নিয়ে ছোট আকারে ব্যবসা শুরু করেন, তিনি দিনাজপুর পৌরসভা থেকে ট্রেড লাইসেন্স সংগ্রহ করেন। এরপর তিনি তার বাসায় কিছু নারী শ্রমিকের মাধ্যমে বুটিক্সের কার্যক্রম শুরু করেন তার বুটিক হাউজের নাম “কর্মউন্নয়ন ফ্যাশন হাউজ”। প্রথম অবস্থায় তিনি তার ব্যবসাক্ষেত্রে নিজস্ব ১ লক্ষ টাকা পুঁজি বিনিয়োগ করেন। তিনি ২০২০ সালে দিনাজপুরে অনুষ্ঠিত এসএমই পণ্য মেলা ও নারী উন্নয়ন মেলায় অংশগ্রহণ করেন, এতে করে তার আত্মবিশ্বাস অনেক বেড়ে যায়। তিনি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন “উদ্যোক্তা সৃষ্টি এবং দক্ষতা উন্নয়ন প্রকল্প” এর অধীনে প্রশিক্ষণ নেয়ায় অত্যন্ত খুশী এই কারণে যে, এখান থেকে প্রশিক্ষণ নেয়ার মাধ্যমে তিনি ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে ঝুঁকি গ্রহণের মানসিকতা এবং নিজেকে আগামীর জন্য প্রস্তুত হবার শিক্ষা লাভ করেছেন বলে তিনি মনে করেন। তিনি চান আগামী দিনে তিনি অন্যান্য নারীদের মাঝে দৃষ্টান্ত হয়ে বেঁচে থাকতে।