District Cox’s bazar
কর্মজীবী শুরু হয় জব দিয়ে। অনার্স শেষ করলাম মাত্র। ডিপার্টমেন্ট হেড মুজিবুল হক চৌং স্যার ডেকে বললেন, আদহাম! তোমার একটা সিভি সময় করে দিয়ে যেও। আমিও ঠিক তাই করলাম। সিভি দিতে আসলে, স্যার বললেন, যাও ২১শে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে আবৃত্তি প্রতিযোগিতা হচ্ছে, অংশগ্রহণ করো। আদেশ মেনে ২৫মিনিটের প্রস্তুতিতে অংশ নিলাম। ফলাফল জানানো হবে ২১শে ফেব্রুয়ারির কলেজের আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে। দু’দিন পর স্যার ফোন দিয়ে বললেন, ২১শে ফেব্রুয়ারির অনুষ্ঠানে আবৃত্তি করতে হবে, “স্বাধীনতা তুমি” কবিতাটি।
২১শে ফেব্রুয়ারি:
যথারীতিতে আমার নাম ঘোষণা করা হলো। আবৃত্তি করলাম। সবার চমৎকার তালি ও ভালোবাসা দেখে, প্রশান্তি পেলাম এই ভেবে! আবৃত্তিটা মন্দ হয়নি। মনে মনে ধরে নিয়েছিলাম, ১ম হতে না পারলে ৩য় এর মাঝে আছি, এটা নিশ্চিত।
কিছু সময় পর, আবার ঘোষণা এলো! আবৃত্তিতে ২য় ও ৩য় স্থান অধিকার করেছে দু’জন ছাত্রী। এমন কি! তিন ইভেন্টে ৯টি পুরস্কারের মাঝে ৮টিই ছাত্রীদের দখলে। বাকী থাকা ১টি পুরস্কার আমার জন্য রয়ে গেলো। আর তা, আবৃত্তিতে ১ম।
অনুষ্ঠান শেষে ডিপার্টমেন্ট হেড ডেকে বললেন, আগামীকাল অনার্স ১ম বর্ষের উদ্বোধনী ক্লাসে উপস্থিত থেকো। আদেশক্রমে সেটাই হলো। উপস্থিত সকল শিক্ষার্থীর মাঝে সকল শিক্ষকদের পরিচয় করিয়ে দিলেন ডিপার্টমেন্ট হেড মুজিবুল হক স্যার। আমাকেও পরিচয় করিয়ে দিয়ে বললেন, আদহাম বিন ইব্রাহিম, ডিপার্টমেন্টের প্রভাষক (খণ্ডকালীন)। ঘোষণা শুনে সারাশরীর ঘামিয়ে গেলো! মাথায় ইশারা করা ছাড়া কিছু বলার সাহস পাইনি। যে আমি গতকাল শিক্ষার্থী হিসেবে কলেজ প্রতিযোগিতায় আবৃত্তিতে ১ম হই! সে আমি আজ সেই কলেজেই শিক্ষকতা করার সুযোগ পেলাম! স্রষ্টার শুকরিয়া আদায় করলা।
শিক্ষকতার পাশাপাশি পার্টটাইম একটি ডেভলপার কোম্পানির সিও হিসেবে দায়িত্ব পালন করি। ভাবতে শুরু করলাম, সামাজিক ও পারিবারিক জীবনে শিক্ষকতার পেশার চমৎকার সম্মান থাকলেও নিরবে দুর্ভিক্ষ বিরাজ করে। সিদ্ধান্ত নিলাম, কক্সবাজার যেহেতু আছি, ট্যুরিজম নিয়ে একটু ট্রেনিং নিয়ে কিছু করা যায় কিনা দেখি! যেমন সিদ্ধান্ত, তেমন এগিয়ে চলা।
ট্রেনিং শেষে বুঝতে পারি, জানলেই হবে না। বিজনেস করতে অর্থেরও বিশেষ প্রয়োজন। শিক্ষকতা, কোচিং সেন্টারে ক্লাস, ডেভলপার কোম্পানিতে পার্টটাইম জব থেকে বাঁচানো টাকা থেকে ৩৫হাজার টাকা দিয়ে শুরু করি ফ্লাই বাংলা ট্যুরস এন্ড ট্রাভেলস নিয়ে কাজ। খুব কাছের বন্ধু থেকে ধার/ঋণ নিয়ে দোকান সালামি দিয়ে ট্রেড লাইসেন্স ও বিদ্যুৎ সংযোগের আবেদন করি। শরু হয় আমার ৩৫হাজার টাকার পথচলা। ডানবাম করে, ক্ষুদ্র এনজিও ঋণ, শেয়ার বিক্রয়ের মধ্যদিয়ে ফ্লাই বাংলা আজ সারা বাংলা সহ বিদেশেও বিশেষ ভাবে পরিচিত। হোটেল সেবা, রেন্ট এ কার, বিমান সেবা, ট্যুর প্যাকেজ, স্টুডেন্ট ভিসা কনসালটেন্ট সহ ট্যুরিজমের প্রতিটি সেবা নিয়ে কাজ করছে “ফ্লাই বাংলা”।
২০১৭ সালের সেই ৩৫ হাজার টাকার প্রতিষ্ঠান, আজ তার ভ্যালো দাড়ালো প্রায় ৩০লাখেরও উর্ধে। যার মাধ্যেমে সারাদেশে তরুণ প্রজন্মের প্রায় ১৫জন রিপ্রেজেনটেটিভ, ১২জন রিলেশন অফিসার হিসেবে কাজ করে কমিশন ব্যাজে। ফ্লাই বাংলার রেফারেন্সে হোটেল রেস্টুরেন্টে জব হয়েছে প্রায় ১০জনের। এমনি ভাবে আদহামের এগিয়ে চলা।
পরতে পরতে ছিলো বাঁধা ও হতাশামাখা হাজারো বুলি। কাছের মানুষ গুলোই ভয় দেখিয়েছে বেশি! প্রশ্ন ছিলো, আদহাম! তুমি আসলেই পারবে? তোমার এতো ভালো রেজাল্ট! এনজিওতে লাখ টাকার চাকরিও পেতে। কেনো এতো রিস্ক নিচ্ছো? আমার উত্তর ছিলো, আমি আমার মাঝে বাঁচতে চাই। নিজস্ব একটি অবলম্বন চাই।
পাশাপাশি গ্রুপ বিজনেসে মন দিলাম, মহিলাদের চাহিদার উপর নির্ভর করে আন্টিদের আহ্বান করি। ৫জন আন্টিকে বুঝাতে সক্ষম হই, একটি লেসিড শপ হলে ভালো হয়। যেখানে কোনো পূরুষ সেলসম্যান থাকবে না। ক্রেতাও হবে মহিলা। সফলতার সাথে ৫জন আন্টি ও ৫জন বন্ধু শুভাকাঙ্ক্ষী নিয়ে শুরু করি “ওম্যান কেয়ার শপ” (শুধুমাত্র মহিলাদের জন্য)। স্লোগান দেয়া হয়, “আধুনিক সাজে নতুনত্বের ছোঁয়া”। ২০১৭ থেকে আজ অব্দি চলছে আমাদের পথচলা।
প্রতিমধ্যে ভাবনা এলো, হতাশায় ডুবে থাকে উদ্যোক্তা হতে চাওয়া তরুণ প্রজন্মের জন্য কিছু করা উচিৎ। প্লানিং করে প্রতিষ্ঠা করি ” দুর্দম উদ্যোক্তা গ্রুপ”। সারাদেশে কার্যক্রম বিস্তার করতে শুরু করি “বাংলাদেশ উদ্যোক্তা ফোরাম”। যার মাধ্যমে দেশের প্রতিটি জেলায় কমিটি গঠনের ধারাবাহিক কার্যক্রম চলছে। আশাকরি, সকল উদ্যোক্তার প্রাণকেন্দ্র হবে “বাংলাদেশ উদ্যোক্তা ফোরাম”।
আদহাম বিন ইব্রাহিম, (৫ম ব্যাচ, ২২৫০৭৪)