District Barguna
মাষীয়া লেদার হাউজ” বরগুনা জেলা শহরে স্থাপিত প্রথম বানিজ্যিক ভাবে চামড়াজাত সামগ্রী প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান । বরগুনা শহরে কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও বেকারত্ব দূরকরণের লক্ষ্য নিয়ে এই প্রতিষ্ঠানের যাত্রা শুরু। এখানে উৎপাদন হয় বিভিন্ন প্রকারের চামড়ার লেডিস ও জেন্স স্যান্ডেল, সু, লোকাল বেল্ট, মানিব্যাগ ইত্যাদি। প্রতিদিন এখানে ১২০ জোড়া জুতা তৈরি করার সক্ষমতা নিয়ে বর্তমানে উৎপাদন কার্যক্রম অব্যাহত আছে।
উল্লেখ্য যে, এটি এই জেলা শহরের একমাত্র চামড়াজাত সামগ্রী প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান।১২ জন অত্যন্ত সুদক্ষ কারিগর তাদের দক্ষতা ও কিছু মেশিনের সাহায্যে তাদের উৎপাদন কার্যক্রম চালিয়ে থাকে। এখানে ব্যবহৃত মেশিনারিজ হলো সুইংমেশিন, ৩ টা স্কাইভিং মেশিন, ১ টা অত্যন্ত হাই কোয়লিটির বড় মেশিন, ২ টা সোল প্রেশ মেশিন, হিটিং মেশিন, এম্বুস মেশিন ও কাটিং মেশিন।
মাষীয়া লেদার হাউজের প্রধান নির্বাহী কর্মকতা উদ্যোক্তা মোঃ মিজানুর রহমানের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে তিলে তিলে প্রতিষ্ঠানটি গড়ে উঠছে।
তরুন এই উদ্যোক্তা মিজানুর রহমান একজন সৈনিক পিতার সন্তান। বাবার ইচ্ছে ছিল ছেলে বাংলাদেশ সেনাবাহিনিতে যোগ দিবে। সেলক্ষ্যে সেনাবাহিনিতে অফিসার ভর্তি পরীক্ষায় ৬৫ ব্যাচে অংশ গ্রহণ করেন। মেডিকেল ও প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় ভালো করলেও লিখিত পরীক্ষায় গিয়ে বাদ পড়ে যায়। এ ঘটনায় এ উদ্যোক্তা ব্যর্থ হয়, তবে ভেঙ্গে পড়েননি। ব্যবসায় শিক্ষা শাখায় লেখা পড়া করার সুবাদে বরাবরই ব্যবসার প্রতি অনেক আগ্রহ ছিলো।
বরগুনা জেলা সদরের পৌর এলাকার বাসিন্দা মো: মিজানুর রহমান। ২০১৪ সালে হিসাববিজ্ঞান বিভাগ থেকে অনার্স শেষ করে নেমে পড়েন ব্যবসায়। ২০১৪ সালে ১৪ই আগস্ট ঢাকা থেকে মোবাইল ফোন ক্রয় করে পাইকারি বিক্রয়ের মাধ্যমে ব্যবসার শুরু । তবে আরো কিছু ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নেওয়ার জন্য নতুন কোন বিজনেস প্লান খুঁজতে থাকেন এই তরুণ উদ্যোক্তা।
পাশের জেলায় পটুয়খালিতে যখন পায়রা বন্দর নির্মীত হচ্ছে তখন থেকেই তার মাথায় চিন্তা আসে কিভাবে এই বন্দরকে কাজে লাগিয়ে ব্যবসা করা যায়। সেই থেকেই মাথায় আসে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানি শিল্প চামড়াজাত পণ্যের ব্যবসা নিয়ে। বরগুনায় অন্য কোন জুতা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান না থাকায় স্থানীয় বাজার চাহিদা মেটানো এবং দেশের বাহিরে উৎপাদিত পণ্য সামগ্রী রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের মাধ্যেমে দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখা যাবে এই ভাবনা থেকেই লেদার ফ্যাক্টরী করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।
কিন্তু সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেই তো হবে না, এর জন্য দরকার যথেষ্ট প্রশিক্ষণ ও প্রশিক্ষিত কর্মী বাহিনী, পর্যাপ্ত অর্থের এবং বাজার অবস্থা পর্যালোচনা। বাজারের পর্যালোচনা করতে গিয়ে তিনি দেখলেন প্রতিষ্ঠিত জুতা বিক্রেতা প্রতেকেই নেতিবাচক কথা বলছেন। আবার ইতিপূর্বে অনেকেই নাকি এ উদ্যোগ নিয়ে ব্যর্থ হয়েছে।
ব্যর্থ না হতে উদ্যোক্তা ছুটলেন প্রশিক্ষণ নিতে স্থানীয় বিসিক অফিসে, তারা উদ্যোক্তার উপরে একটা প্রশিক্ষণ প্রদান করে এবং চামড়া শিল্পের উপরে প্রশিক্ষণ নিতে ঢাকা বিসিক হেড আফিসে যোগাযোগ করতে পরামর্শ প্রদান করেন।বিসিক এবং ঢাকা জিরাবোতে লেদার সুজ প্রস্তুতের উপারে প্রশিক্ষণ নেওয়ার পরেও সফল উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য আরো অনেক কিছু জানার প্রয়োজন অনুভব করেন তিনি।
তখনি বিডার (ESDP) এর প্রশিক্ষণ সম্পর্কে জানতে পারেন । অবশেষে বিডার (ESDP) থেকে সফল উদ্যোক্তা হবার জন্য বরগুনা জেলা অফিস থেকে (চতুর্থ ব্যাচ) এ উদ্যোক্তা বিষয়ের উপারে বিস্তারিত প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। এরপর ২৬ জানুয়ারী, ২০২০ ইং তারিখে প্রতিষ্ঠা করেন “মাষীয়া লেদার হাউজ” । প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠা করার ব্যপারে বিডার বরগুনা জেলার (ESDP) অফিস থেকে তিনি যথেষ্ট পরিমাণ উৎসাহ অনুপ্রেরণা ও সাহস পেয়েছেন।
স্থানীয় এক (এন জিও) থেকে ০৬ লক্ষ টাকা এবং নিজেস্ব ০৬ লক্ষ টাকা মোট ১২ লক্ষ টাকা মূলধন নিয়ে শুরু করা হয় এই মাষীয়া লেদার হাউজ নামের প্রতিষ্ঠানটি।
কিশোরগঞ্জরে ভৈরব থেকে প্রথমে ৪ জন কারিগর নিয়ে যাত্রা শুরু করে বর্তমানে স্থানীয় সহ মোট ১২ জন কাজ করে ফ্যাক্টরিতে এছাড়াও আরো ৪/৫ জন খন্ডকালীন চুক্তিভিত্তিক কর্মী রয়েছে। মাষীয়া লেদার হাউজের উৎপাদিত পণ্য সামগ্রী গুণগত মান ভালো হওয়ায় অত্যন্ত স্বল্প সময়ের মধ্যেই স্থানীয় বাজারে এর ব্যাপক চাহিদা তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে।
নতুন উদ্যোক্তা মো: মিজানুর রহমানের বলেন, “নদনদী বিধৌত শিল্প ক্ষেত্রে অনগ্রসর এই জনপদকে উন্নত করতে হলে শিল্প কারখানা স্থাপনের কোন বিকল্প নেই। আমার ধারণা নদী পথে কাঁচামাল আনার ফলে পরিবহন খরচ কম, অন্যদিকে পায়রা বন্দর চালু হলে রপ্তানি খরচ অনেক কম হবে। ফলে নির্ধারিত মূল্যে অত্যন্ত উচ্চ মানসম্মত পণ্য রপ্তানির মাধ্যমে বাংলাদেশের সুনাম ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করা সম্ভব। প্রতিষ্ঠানটির উদ্যোক্তা হিসাবে আমি মনে করি শুধু নিজের ভালো থাকার জন্য নয় চারপাশের সবাইকে নিয়ে ভালো থাকাই আমার লক্ষ্য। অদূর ভবিষ্যতে এই প্রতিষ্ঠনটিতে শত শত লোকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে বলে আমি মনে করি এবং সেই লক্ষ্য নিয়েই আমার প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।